কৃষান কন্যা রাহিলা |
প্রতিদিনই আমি এক একটি ভাবনা নিয়ে জেগে উঠি। ঠিক তেমনি আজও জেগেছিলাম কিন্ত লেখা হয়ে উঠেনি। আজ মনে পড়ল মেজে ভাই এর কথাগুলি, ফেসবুক বন্ধু চান মঙ্গলের কথাগুলি, মনে পড়ল আমার সপ্নের বাংলাদেশের কথা, মনে পড়েছিল আমার সন্তানদের কথা , মনে পড়ল ফেসবুক বন্ধুদের কথা যাদের আমি মাঝে মাঝে ব্লক করে দেই, মনে পড়ছিল-ফেসবুক বন্ধু ক্রিস্টোফার মার্ক উইংগেট, দুজন সানতানি, আগা তারিক এইচ খান, মানব সেয়ানা, জায়েদ নাসিরসহ সকল প্রিয় বন্ধুদের। অনেকে্ই আমার উপর রেগে আছে যা আমি জানি কিন্ত করার কিছুই নাই। আজ ভাগ্যের কাছে আমি বড় অসহায়।
মনে পড়ছিল আমার প্রথম দেখা একজন মুক্তিযোদ্ধা শেষ পরিনতি। বড়ই জানতে ইচ্ছা করে কি হয়েছিল তার ? কেন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ছটফট্ করে মারা গেল ?
মনে পড়ে-১৯৮০ সন। আমাদের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র লোহাগড়া। আমি আব্বার সাথে পরীক্ষা দেবার জন্য লোহাগড়া গেলাম। থাকার স্থান হল পশু ডাক্তার আকরাম ভাইয়ের বাসায়। তিনি আমাদের বাড়ীতে লজিং থেকে পড়তেন ছাত্রজীবনে। আমার মাকে মা ডাকেন। আমাকে ভিষন আদর করেন। আকরাম ভাই এর ডাক নাম দিলু। উনার আরও কযেকজন ভাই আছেন-ডাকু ও টুকু জাস্ট ডাক নাম। ডাকু ভাই সম্ভবত যশোহর তজবির সিনেমা হলের মালিক ছিলেন তখন। আমি তাদের সেদিন সকলকেই দেখেছি। কিন্ত আজ আর কাউকেই মনে নেই। সবই স্মৃতি।
সবচেয়ে বড় স্মৃতি হল-আমার সেদিন পরিচয় হল ছিনতীর সাথে। সেও এসএসসি পরীক্ষাত্রী। দুজন একসাথে পরীক্ষা দিতে যেতাম ও ঘুরে বেড়াতাম অনেক সময়। তাদের দ্বোতলা একটি বাড়ী। সামনে বিরাট পুকুর। বিরাট এলাকা। ভিষণ সুন্দর পরিবেশ।ছিনতী ভাল গান গাইতে পারত। ওর ছোট ভাই নাম ছিল পরাগ।
হঠাৎ একদিন দেখতে পেলাম-দ্বোতলার ঘরের মেজেতে বিরাটকায় একজন সুন্দর মানুষ তাকে ঘিরে রেখেছে অনেক আপনজনেরা আর তার মাথায় পাখার বাতাস করছে। আমি হঠাৎ অবাক হলাম। কি হয়েছে উনার ? সমস্যা কি ? জানলাম এই হল ছিনতীর বাবা লেফট্যান্ট মতিউর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা উনার ব্রেন টিউমার হয়ে এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত। বাহিরে ছিলেন সকল চিকিৎসা ব্যার্থ তাই বাড়ীতে আনা হয়েছে।
তারপর পরীক্ষা শেষ হলে বাড়ীতে ফিরে এলাম। কিছুদিন পরে খবর পেলাম ছিনতীর বাবা লে: মতিউর রহমান মারা গেছেন। আমি কষ্ট পেলাম ছিনতী ও পরাগের জন্য। ওরা কত ছোট বাবাকে হারিয়েছে। আরও জেনেছিলাম আওয়ামীলীগ সরকার তাদের পরিবারকে সাহায্য করেছিল। তারপর আর মনে রাখার সময় হয়নি।
আজ ভাবছি কেন মানুষ অসুস্থ্য হয় ? কেন ব্রেন টিউমার হয় ? কেন ক্যান্সার হয় ? কেন মারা যায় ? আর মৃর্তুতে তাদের সবকিছুই শেষ হয়ে যায় । আমরা তাদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে পারি কেবল তাই ছাড়া কিছুই করনীয় থাকে না। একজন লে: মতিউর স্বাধীন বাংলাদেশের সপ্ন দেখে যুদ্ধ করেছিলেন সেদিন অথচ সেই স্বাধীন দেশে তিনি বেশিদিন স্থায়ি হতে পারেননি, তার সন্তানদের মানুষ করে দেখে যেতে পারেননি। তার ব্রেনে কেন টিউমার হল ? তিনি কি আমার মত বেশি চিন্তা করতেন ?
তাইত সকালে হঠাৎ ভেবেছি-আমার লেখাগুলিকে কিছুটা সংরক্ষণ করতে চাই অন্তত সেলুলযেডের ফিতায় না হলেও কাগজের পাতায় কেবল আমার আগামী সন্তানদের জন্য।---কৃষান কন্যা রাহিলা, ১৫ নভেম্বর,২০১১ খ্রি:,সকাল ৯-১৭ মি:
No comments:
Post a Comment