Welcome to the Queen Krishan Konna of Bangladesh.

Welcome to the Queen Krishan Konna of Bangladesh.

Friday, September 9, 2011

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১, মুক্তিযোদ্ধা ও কিছু কথা

Krishan Konna Rahila

আমার জীবনে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা বিশেষ তাত্‍পর্যপূর্ণ৷ নড়াইল আমার জন্মস্থান তাই সেখান থেকেই শুরু করতে চেয়েছিলাম৷ গত ২রা ডিসেম্বর/০৯ তারিখে নড়াইল উকিল বারের দ্বোতলায় এডভোকেট সন্তোষ বিশ্বাস দাদার টেবিলে বসে আলাপের এক পর্যায়ে জানালেন তিনি- By the people, of the people Av‡Q but for the people নেই৷ আর আমি সেই ফর দি পিপলস খুজাঁর জন্য সেখানে বসে থেকে একসময় চলে এলাম৷ তার মতের সাথে আমারও মতের মিল ছিল অনেকটা৷ আমার সব দেখা শেষ হয়েছে৷ এবার আমার উপসংহার এর পালা৷

আমি আমার জীবনী " এ বিচার আমি কার কাছে চাইব"-তে ১৯৭১ এর স্মৃতি লিখেছি৷ ১৯৭১ সনে আমার বয়স এগার বছর৷ সেই ছোট জীবনে যা দেখেছি তত্‍কালীন এলাকায় আওয়ামীলীগ সংগঠনকারী একটি মাত্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করে আর সেই দু:খ কষ্ট যন্ত্রনার স্মৃতি বিজড়িত দিনগুলির কথা আমি আমার জীবনীতে তুলে ধরেছি৷ ১৯৭১ সেই গ্রাম বাংলার নিম্ন মধ্যবিত্ত সমাজের খেটে খাওয়া কৃষকের সংগ্রামী জীবনে যে প্রভাব ফেলেছিল যা এই মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবি, ধনী পরিবারের থেকে অনেক অনেক গুন বেশি ক্ষতির কারণ হয়েছিল যা আজ বলার অপেক্ষা রাখেনা৷ আর সেদিনের সেই প্রেক্ষাপট আর আজকের বাস্তবতার আলোকে আমি তার কিছুটা তুলে ধরতে চেষ্টা করছি মাত্র৷

প্রবাদ আছে- 'মাছে ভাতে বাঙ্গালী৷' আর তত্‍কালীন নিম্ন মধ্যবিত্ত কৃষক সমাজ কোন প্রভুদের রক্ত চক্ষুকে ভয় করতেন না৷ তারা ছিলেন স্বাধীন৷ তাদের ছিল গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরু৷ তারা কারো উপর নির্ভরশীল ছিলেননা৷ তাই সেই শোষকের দ্বারা বেশি মাত্রায় শোধিত হয়েছে মানধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে মধ্যবিত্ত ধনী শ্রেণীরা বেশীমাত্রায়৷ তাই যেদিন বঙ্গবন্ধু এ দেশের গণ মানুষের মুক্তির জন্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন, সোনার বাংলা গড়ার সপ্ন দেখেছিলেন, সেদিন এদেশের সকলশ্রেণী বিশেষ করে সেই নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকের সংখ্যাই হয়ত বেশি ছিল৷ যে সকল সৎ, নৈতিকতা, আদর্শের সৈনিক যারা মাটির সাথে যুদ্ধ করে জীবন সংগ্রামে এগিয়ে যাচ্ছিল৷ হয়ত তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার সপ্ন দেখতেন৷ তাদের সন্তানরা কেহ স্কুলে, কেহ কলেজে, কেহ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছিলেন৷ আরও ছিলেন চিকিত্‍সক, অধ্যাপক, সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষ৷ আর সেদিন কেহ মুক্তিযোদ্ধার চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে, কেহ দেশ রক্ষায় স্বপ্রনোদিত হয়ে, কেহ আবার পরিস্থিতির স্বিকার হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন৷

আর একটি কথা আছে যে-শত্রুর সামনে বুক পেতে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়৷ তাকে ট্যাক্টফুলি আয়ত্ব করতে হবে৷ আর সেদিনের সেই প্রেক্ষাপটে এ দেশের অবস্থান অনুয়ায়ী নকশাল, রাজাকার, মুক্তিযোদ্ধার সৃষ্টি হয়েছিল৷ আমাদের গ্রামটির সামনেই নদী থাকায় সেখানে নকশালের সৃষ্টি হয়েছিল৷ তাই যেদিন রাতে নকশালরা আমাদের গাছে, ঘরের দেয়ালে লিফলেট টানিয়ে গেল ও তারপরদিন রাতে শশরীরে নকশালরা এসে আমার বাবাকে বলেছিল-ছেলেকে আমাদের দলে দিতে হবে ও আমাদের খাবার, টাকা দিতে হবে৷ সেদিন আমার বাবা আমার বড় ভাই নুরুল ইসলামকে গোপনে তাদের হাত থেকে বাচাঁবার জন্য দুইজন লোকের সাথে ভারতে পাঠিযে দিলেন যুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য৷ মাযের কাছে জেনেছি, যাবার বেলায় আব্বা তারঁ হাতের আংটি খুলে বড় ভাই এর মাজার সুতার সাথে বেধে দিয়ে বলেছিলেন, 'যদি কখনও বিপদে পড় এটা কাজে লাগবে৷" আমরা সেই বাবার সন্তান৷ আর তার এই বড় সন্তান নুরুল ইসলামকে মানুষ করার জন্য নলদী স্কুলের সকল প্রধান শিক্ষকদের আমাদের বাড়ীতে রাখতেন৷ আরও অনেক ছেলেরা আমাদের বাড়ীতে লজিং থেকে মানুষ হয়ে গেছে৷

তারপর একদিন বড় ভাই ভারত থেকে ফিরে এলেন৷ কিন্ত বাড়ীতে থাকতেননা৷ দশ পনের দিন বাড়ির বাহিরে থাকতেন৷ এদিকে প্রতিদিন আমাদের নকশালদের খেতে দিতে হত পালাক্রমে৷ কেবল দাদা সুরেস চন্দ্র মুর্খাজী ও আমাদের সকলকে নিরাপদ থাকার জন্য৷ আমার বড় বোনকে পাক বাহিনী, রাজাকার ও নকশালের ভয়ে সেদিন অনুষ্ঠান না করেই তার শশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হল৷ আর আমার ইমিডিয়েট বড় মেজে বোনকে মামা আবুল খায়ের (বাংলাদেশের মামা, বীর মুক্তিযোদ্ধা থেতাবে ভুষিত) নড়াইল নিয়ে তার ফুফাত বোনের ছেলের সাথে বিয়ে দেয়৷ কেবল সেই ভয়ংকর বিপদের সময় মায়ের সাথে গ্রামে রইলাম আমি৷ সেদিন আমার উপর আরও দায়িত্ব বেড়ে গেল৷ বড় ভাই ১০/১৫ দিন বাড়ীর বাহিরে থাকতেন৷ মাঝে মাঝে রাতের অন্ধকারে অথবা হঠাত্‍ হঠাত্‍ বন্ধুদের নিয়ে চলে আসতেন৷ তখন দ্রুত মাকে তাদের ভাত রান্না করতে হত৷ মায়ের সাথে ছোট তিন ভাইবোনকে দেখাশুনাসহ তার কাজে সাহায্য করার মত আমিই একমাত্র ভরসা৷ অথচ আমার এক ননদ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা লিখেছেন তিনি তার স্বামী উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হিসাবে যুদ্ধের অধিকাংশ সময় খুলনায় বড় মেয়েকে (আমার বয়সী) নিয়ে স্কুলে আসা যাওয়ার পথে তিনি যুদ্ধ দেখেছেন৷ যখন আমার পড়ালেখা করার কথা সেদিন আমি কি করেছিলাম ? কেন করেছিলাম ?

মাঝে মাঝে হেলিকপ্টারের শব্দ ও লঞ্চের শব্দ হলেই আব্বা আমাদের নিয়ে নৌকায় করে মাঠের অপর পাশে গ্রামের দিকে চলে যেতেন৷ মা আমাদের সাথে চিড়া, গুড়, খাবার দিয়ে দিতেন৷ মা ও দাদী যেতে চাইতেননা বাড়ী ছেড়ে৷ মাকে কোনদিন জোর করে নিয়ে যেতাম৷ এসে দেখতাম চুলায় হাড়ীতে ভাত পুড়ে গিয়েছে অথবা রুটি তাওয়ার উপর পুড়ে আছে৷ এমনি নিত্য নতুন ঘটনা ছিল আমাদের বাড়ীতে৷ আর নলদী মিলিটারী রাজাকার মানেই আমাদের বাড়ীতে হানা দেয়া কারণ তত্‍কালীন সময়ে একজন সাহসী বীর নুরুল ইসলামের জন্ম হযেছিল উক্ত এলাকায়৷ অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার৷ সততা, নৈতিকতা ও আদর্শের প্রতিক৷

" মনে পড়ে- ভাই যখন ১০/১৫ দিন বাড়ীর বাইরে বন্ধুদের সাথে  থেকেছে সেদিন আমি মাকে সারাক্ষণ কাদঁতে দেখেছি৷ একদিন দেখলাম অনেক দিন পর ভাই কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে বাড়ীতে এল তার পূর্ব পাশ্বের ঘরে তাদের খেতে দিলাম৷ তারা খেতে বসেছে, হঠাত্‍ লঞ্চের শব্দ মিলিটারী, রাজাকার আসছে ভেবে তারাঁ সকলে না খেয়ে সামনে ভাত রেখে পিছন দিয়ে পালিয়ে গেল, আমি দেখলাম তাদের সব রাইফেল, গুলির সব বান্ডিল পড়ে আছে মেঝেতে৷ মেজে ভাই এসে তা নিয়ে পিছনের পাটের জমির ভিতর রেখে এল৷ আজ সবকিছু দেখে কেবলই মনে হয় বড় ভাই সেদিন বন্ধুদের সাথে দশ বারোদিন বাইরে থাকতেন তারা হলেন মুক্তিযোদ্ধা৷ কারন সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন দেখতাম আমাদের কাচারি ঘরে গাছে লিফলেট টানিয়ে গেছে তাতে লেখা-টাকা চাই, খাবার চাই অথবা মাথা চাই৷ আমার আব্বাকে দেখেছি ঘরের গোলা কেটে চাল উঠানে ঢেলে দিয়েছে আর গ্রামের দরিদ্র জনগণ তা থামা বস্তায় করে নিয়ে গেছে৷ আমাদের খাবার খেয়েই সেদিন গ্রামের অনেক লোক বেচেঁ ছিল৷ আমি যে নকশালদের ভাত খাইয়েছি তারা আমাদের আশে পাশের গ্রামের লোক৷ একদিন একজন লোক একটি রক্তাক্ত চাপাতি এনে তা ধোয়ার জন্য আমার কাছে সাবান চাইল আর আমি তা নিয়ে আমাদের পুকুর ঘাটে দাড়িয়ে রইলাম৷ দেখলাম পুকুরের পানি রক্তাক্ত হয়ে গেছে৷ এই হল নকশাল আর সেই হল মুক্তিযোদ্ধা৷

১৯৭১ সাল৷ একটি দিনের কথা৷ দুপুরবেলা৷ হঠাত্‍ পশ্চিম দিক হতে কামানের গুলা বর্ষিত হচ্ছে৷ মাটি কেপে উঠছে৷ এমনি সময মেজে ভাই আমাদের চার ভাইবোনকে নিয়ে উত্তর ঘরের পিছনে টয়লেট এর পিছনে পজিশন নিয়ে থাকলেন৷ এমনি সময় আমার ছোট বোন সালমা বযস খুর সম্ভব দেড় বছর৷ সে মাথা উচু করে ফেলছিল বার বার আমি তার মাথা মাটির সাথে আটকে রাখতে চেষ্টা করছিলাম আর সে বার বার উচু করে কান্নাকাটি শুরু করল৷ একসময় মা এসে তাকে নিয়ে আমাদের সেফ করতে চাইল৷ তখন মেজে ভাই আমাদের তিনভাইবোনকে (আমি বাবু ও আহাদ) নিয়ে বাড়ীর পিছনে চাচাদের বিরাট শনের জমির ভিতর দিয়ে হাটায়ে ইটের ভাটার কাছে নিয়ে গেল৷ সেখানে পজিশন নিয়ে কিছুক্ষণ থাকলাম যাতে কামানের গুলি আমাদের গায়ে না লাগতে পারে৷ ঐ শনের জমিতে ছিল প্রচুর কাটাঁ ও সাপ৷ সেদিন আমাদের সে ভয় ছিল্না৷ একসময় চাচাত ভাই জয়নাল এসে আমাদের তাদের বাড়ীতে নিয়ে যান ও পরে অন্য বড় চাচাত ভাইয়ের উঠানে ঘরের দেয়াল ঘেসে বসে থাকলাম৷ একসময় কামানের শব্দ বন্দ হয়ে গেল আর আমরা বাড়ীতে ফিরে এলাম৷ এমনি সেদিন প্রতিদিনের ঘটনাই ছিল এরকম৷ যা মনে পড়লে আজও শিহরিত হই৷ আর আমাদের পরিবারকেই ঐ সময় কেবল প্রতিনিয়ত এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল৷ তার বড় কারণ ছিল আমার বাবাই একমাত্র প্রকাশ্যে চাচাত ভাইদের বিরুদ্ধে নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন আর আমার ভাই ছিল সেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত এক দু:সাহসীক যুবক যার শত্রু ছিল নকশাল, শত্রু ছিল মিলিটারী ও রাজাকার ৷ তাকে প্রতিনিয়ত বেচেঁ থাকতে হয়েছে এত শত্রুদের মাঝদিয়ে৷ কিন্ত আজও মানুষ তাকে মুল্যায়্ন করতে পারেনি৷ তিনি সত্যিকার অর্থে কি ছিলেন ?

দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় কাছাকাছি একটি সময়৷ সেদিন ছিল পড়ন্ত বিকাল৷ আমি চাচাত বোনের সংগে খেলা করছি উঠানে৷ পাশে দাড়ান চাচার বড় মেয়ে৷ খেলা দেখছে বড় ভাই৷ বলছে, এ কেমন খেলা ? খেলার নাম কি ? হঠাত্‍ রাইফেলের আওয়াজ৷ ভাই এক দৌড়ে ঘরে উঠতে ছিল৷ মনি চাচী নামাজে বসা অবস্থায় হাত ইশারা করলেন ঘরে নয়, পাটের জমিতে মাঠে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন৷ বড় ভাই পাটের জমির ভিতর চলে গেলেন৷ আর আমি এক দৌড়ে বাড়ী এলাম৷ এই সময় বড় দুলাভাই বড় বোনকে নিয়ে আমাদের বাড়ীতে বেড়াতে এসেছেন৷ আমি আমাদের কাচারী ঘরের প্রধান দরজা লাগাতে গিয়ে দেখতে পেলাম অনেক লোক রাইফেল হাতে আমাদের বাড়ীর দিতে ছুটে আসছ্\ তখন খাটের উপর থেকে আমাদের রেডিওটি নিয়ে তিন বোন ও দুলাভাই আমাদের বাড়ীর উত্তরদিকের পাটের ক্ষেত দিয়ে পাশের গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিলাম৷ অবস্য রেডিওটি পাট গাছের ভিতর ফেলে দিয়ে গিয়েছিলাম৷ আমাদের গ্রামে রাজাকার আর মিলিটারী আসা মানে কেবল আমাদের বাড়ী আত্রুমন করা বুঝাত সে সময়৷ কারন ঐ এলাকায়ই তখন একজন নেতা সে হল ভাই আর সবার আত্রুমন আমাদের উপর কারন আমরা ছিলাম কেবল পাকিস্তান বিরোধী৷ আর একটি ছেলে তার নাম সাঈদ৷ যিনি বড় ভাই এর সাথে থাকতেন৷ তিনি আজ ও বেচেঁ আছেন কিন্ত তাকে আমি আর দেখিনি কখনও হয়ত আজ তিনিই অনেক সত্য কথা বলতে পারবেন যা আজ কালের অন্ধকারে ঢাকা পড়ে গেছে৷ তার বাবার নাম ইউসূফ মাওলানা৷ সারাদিন এসএম সুলতানের মত বড় জামা আর তসবিহ থাকত তারঁ হাতে৷ ঐ ছেলেটিও ভাল ছিল কারন ঐ রকম পরিবারেরর্ ছেলেরা সাধারনত খারাপ কাজ করতে পারেনা বলে আমার আজ মনে হয়৷ কিন্ত অপরাধ কেবল তারা দুজন আদর্শের জন্য দেশের জন্য লড়ছেন৷ তাই মিলিটারী রাজাকারদের আত্রেুাশ কেবল আমাদের সাথে ঐ পরিবারের উপরও ছিল৷ তাই সেদিন আমার আব্বা কেবল বিকালে হাট শেষ করে বাড়ীর পথে রওনা হয়েছিলেন ঠিক তখন পথেই কিছু পরিচিত লোক তাকে পাশের একটি বাড়ীতে আটকে রেখেছিল৷ সামনে আসতে দেয়নি৷ কিন্ত সেই মাওলানা কেবল আসরের নামাজ পড়ে এক গ্লাস পানি সাঈদের মায়ের কাছে চাইলেন৷ আর এমনি সময় সেই গুলির আওয়াজ যে আওয়াজে ভাই ও আমরা পালিয়ে গেলাম৷ গুলির শব্দে তিনিও অস্থির হয়ে উঠলেন৷ তিনি পানি না খেয়ে ছেলের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ছুটে আসলেন আমাদের বাড়ীর দিকে যেদিকে গুলাগুলি হচ্ছিল৷ আমাদের বাড়ীকে সবাই বড় বাড়ী বলে ডাকে৷ পাশাপাশি পাচঁটি বাড়ি৷ প্রথমটা আমাদের৷ তারপরের গুলো আমাদের চাচাদের৷ উনি হেটে আমাদের বাড়ী অতিক্রম করে প্রথম চাচার বাড়ী পর্যন্ত গিয়েছেন আর পিছন থেকে রাজাকার ও মিলিটারী এসে তার পিটে বুকে গুলি করে ঝাঝরা করে দিল৷ তিনি পানি পানি করে চিত্‍কার করছিলেন কিন্ত কেহই তাকে পানি দেওয়ার জন্য সাহস করে ঘর থেকে বের হতে পারছিলনা৷ তার ওখানে আসার উদ্দেশ্য একটি ছিল তার ছেলে কোথায় কি করছে তা দেখতে এসে নিজেই নির্মমভাবে রাজাকারের হাতে জীবন দিলেন৷ রাজাকার মিলিটারী চলে গেলে সবাই বাইরে এসে দেখল তার মৃতু দেহ কাচারী ঘরের সামনে পড়ে আছে বিত্‍স অবস্থায়৷ তবে ঐদিন সেই ছেলেটি কোথায় কি অবস্থায় ছিল আজও জানিনা৷ জানার চেষ্টাও কোনদিন করিনি৷ আর আমাদের অবস্থা সেদিন কি হয়েছিল ? আমরা তিন বোন সেদিন দৌড়ে পাশের গ্রামের এক বাড়ীতে অনেক রাত পর্যন্ত কাটালাম৷ আর আমার দুলাভাই ছিলেন খুবই ভিতু৷ স্বাধীনতার সময় অনেক লোক যারা কোন কিছুর ভিতর না গিয়ে কেবল নিজেকে বাচাতে চেষ্টা করেছে আজ তাদের সংখ্যাও কম নয়৷ তাই দুলাভাই যখন এক বাড়ীতে (নামকরা আজও আছে ) ঢুকার চেষ্টা করছে ঠিক তখনই তারা তাকে আশ্রয় দেইনি কারন সে আমাদের আত্মীয় বলে৷ যদি পাকবাহিনী জানে যে আমাদের আত্মীয়কে তারা সেল্টার দিয়েছে তখন তারা তাদের মেরে ফেলবে এই ভয়ে৷ মায়ের কাছে জেনেছি একদিন মিলিটারী আসার সংবাদ পেযে আমার আব্বা টাকার বান্ডিল মাজায নিয়ে তার চাচার বাড়ী আশ্রয় নিতে গিয়েছিলেন তারপর তার চাচী তাকে নুরুল ইসলামের বাবা বলে আশ্রয় দিতে চায়নি৷ আজ এসব কথা ভাবতে গেলে অবাক হই৷ আমরা রাতে তিন বোন ফিরে এলাম৷ এসে জানলাম আমাদের বাড়ীর সামনে সাঈদের বাবাকে হত্যা করা হয়েছে এবং ডেড বডি এখনও পড়ে আছে৷ কিন্ত আমরা ভয়ে দেখতে যাইনি৷ সারাদিনের ক্লান্তির পর হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছিলাম৷ সে সময় যারাই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল ঠিক তার পরিবারে একটা আত্মত্যাগ আছেই৷ পরে জানলাম আমাদের এলাকার মিলিটারী ক্যাম্প মুক্তিবাহিনীরা দখল করে নিয়েছে৷ তারপর আর তেমন কোন দাগ কাটার মত স্মৃতি মনে নেই৷

আমি দেখেছি সেদিন বড় ভাইকে একদিকে মিলিটারী, রাজাকার আবার অন্যদিকে নকশাল তাড়া করে ফিরেছে৷ কিন্ত মনে তার স্বাধীনতার সপ্ন৷ একদিনে দাদা সুরেশ চন্দ্রকে মুর্খাজীকে বাচঁনো, অন্যদিকে বাবা মা ভাই বোনদের বাচাঁনো বড় হিসাবে তাকেই ভাবতে হত তারপর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে দশ পনের দিন বাড়ীর বাইরে থাকতে হত৷ সেই বড় কঠিন সময় পার করে একদিন স্বাধীন হল আবার সবার মন স্বাধীনতার আনন্দে ভরে গেল৷ একসময় নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হলেন৷ আমার মনে নেই তবে খুব সম্ভব ১৯৭৫ সনে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রলীগের কোন পোস্টে জড়িত ছিলেন৷ কালিয়ার এখলাস সাহেব বড় ভাইকে ভিষন ভালবাসতেন৷ আর তার সহপাঠি ছিলেন সোহরাব ভাই, সিদ্দিক ভাই ও অন্যান্যরা৷ কিন্ত ১৯৭৫ সনের ১৪ই মে রাতে একটি অসহায় হিন্দু পরিবারকে অশুভ শক্তির হাত থেকে বাচাঁনোর জন্য তাদের নিমন্ত্রণ পেয়ে রাতের আধারে ছুটে গিয়েছিলেন যা আমি আমার গল্পে লিখেছি৷ তারপর ফেরার পথে নলদী স্কুলের কিছুটা পুর্ব পাশের বড় রাস্তার উপর তাকে রাজাকারেরা বুলেটবিদ্ধ করে বেনয়েটে খুচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল৷ আজ নড়াইলের সেই ১৯৭৫ সনের নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের দু:সাহসী বীর ছাত্রনেতা মুক্তিযো্দ্ধা নুরুল ইসলামকে সকলে ভুলে গেলেও আমি ভুলিনি৷ আজ আমার ভাইয়ের মত মানুষ এদেশে প্রয়োজন৷ তাই কেবলই বলতে ইচ্ছা করছে-

'মিয়া ভাই আজ তোমাকে যে আমার বড় প্রয়োজন৷ ১৯৭১ সনে সেই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে যে হাতিয়ার তুলে নিয়েছিলে- তুমি ফিরে এসো আর একবার এই বাংলায়, সেই হাতিয়ার তুলে ধর সেই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে যারা তোমার সেই অনেক আদরের বোনটিকে প্রতিবন্ধী করেই ক্ষান্ত হয়নি অবশেষে পঙ্গু করে দিয়েছে৷ একদিন তুমি এই সোনার বাংলার সপ্ন দেখেছিলে, তোমার বোনকে ঢাকায় চাকুরী করাবে তাই মাকে সব সময় বলতে৷ ভাই আমি এসেছিলাম তোমার সেই সপ্নের শহরে কিন্ত সেই অশুভ শক্তি আমাকে ক্ষত বিক্ষত করে রক্তাক্ত করে দিয়েছে৷ তুমি ফিরে এসো আর এদের বলে দাও আমি এদেশের একজন শ্রেষ্ট কৃষকের কন্যা যার বাবা ১৯৭১ সনে তার গোলা কেটে চাল ঢেলে দিয়েছিল এলাকার দরিদ্র জনগনের জন্য৷ আর গ্রামের বড় বাড়ী হিসাবে সেদিন তার মাকে সব সময় নকশালের ও মুক্তিযোদ্ধাদের ভাত রান্না করতে হয়েছে৷ উক্ত এলাকার যাদের বাড়ীতে আওয়ামীলীগ সংগঠিত হয়েছিল এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে হয়ে আসছে৷ যাদের বাড়ী চিনেনা আওয়ামীলীগের এমন নেতা নড়াইলে জন্ম হয়নি৷ আর সেই ১৯৭১ থেকে আমরা কেবল দেশের জন্য দিয়ে গেলাম৷ আমার মা দীর্ঘ ৩৪ বছর তার ছেলের বিচার স্বযং আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছে আর আমিও আজ আমার দীর্ঘ জীবনের কষ্টের দু:খের বিচার আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি৷"

"এমনি করে সুখে কাটছিল একটি পরিবার৷ কিন্ত ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সবকিছু উলটপালট হয়ে গেল৷ সেদিন বড় ভাইয়ের সাথে দাদাকেও আমরা হারিয়ে ফেললাম৷ বড় অসহায় অবস্থায় অভিভাবকহীন অবস্থায় আমাদের রাত কাটাতে হত৷ দাদা ছিল আমার মায়ের সন্তানের মত৷ প্রতি রাতে আমার সন্তানহারা মায়ের কান্নার আওয়াজ শুনতে শুনতে ঘুমাতে হত ও ভোরে জাগতে হত৷ কখনও কখনও আামার মাকে খুজেঁ পাওয়া যেতনা৷ আর তখনই গিয়ে দেখা যেত সে ভাইয়ের কবর জড়িয়ে শুইয়ে আছে৷ ১৯৭৫ সাল আমাদের জীবনে এত ট্রাজেডী এনে দিয়েছিল যা আজও আমাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে৷ কি অপরাধ করেছিল আমার বাবা মা ? আমার ভাই ? আমরা অসহায় ভাইবোন ? আজ সব দেখে মনে হয় সেদিন যদি অজ পাড়াগায়ে জন্ম নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের সপ্ন না দেখতেন, সেদিন যদি বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবী না উঠত৷ তবে ষাট দশকের উঠতি সত্যিকারের দেশপ্রেমিক যুবকের রক্ত গরম হয়ে উঠতনা৷ আর ব্রাম্মনের আদর্শে গড়া এতিম ছেলেটির (আমার বাবা) সকল সপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যেতনা৷ নির্মমভাবে জীবন দিতে হতনা তাদের সামনে তাদের প্রথম সনত্মানকে৷ যাকে নিয়ে তারা সপ্ন দেখতেন৷ আজ মুক্তিযোদ্ধা, গণতন্ত্র, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এসব শুনলে আমার ভিষণ খারাপ লাগে৷ আজ আমি কিছুই সহ্য করতে পারিনা৷" (এ বিচার আমি কার কাছে চাইব গল্প হতে সংকলিত)৷

তারপর সময়ের পরিবর্তনের সাথে সবকিছুরই পরিবর্তন হয়েছে৷ পরিবর্তন হয়েছে মানুষের আদর্শ ও নৈতিকতার৷ কিন্ত ইতিহাস কখনও মিথ্যা হয়ে যায়না৷ একদিন তার প্রকাশ ঘটেই৷ আমার দীর্ঘ ঢাকার প্রশাসনিক জীবনে আমি অনেক কিছু জেনেছি, দেখেছি৷ সেদিনের সেই মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে প্রায় দেশ বিদেশের সকল চাকুরীরত অথবা চাকুরী ছাড়া বাঙ্গালীই মুক্তিযুদ্ধকে সার্পোট করেছিলেন৷ আবার জেনেছি সেদিন কেবল অস্ত্র হাতে যারা যুদ্ধ করেছেন তারাই মুক্তিযোদ্ধা নয় যারা সেদিন সার্পোট করেছিলেন তারাও মুক্তিযোদ্ধা৷ যারা সেদিন যে অবস্থার ভিতর ছিলেন সেই অবস্থার ভিতর থেকেই সত্যিকারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে যুদ্ধ করে গেছেন৷ আজ এটাত স্বিকার করতেই হবে৷

আর আজকের প্রেক্ষাপটে মনে হয় ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অশুভ শক্তিতে এদেশ ভরে গিয়েছিল৷ আর সেদিন থেকে বঙ্গবন্ধুর সপ্নে দেখা সোনার বাংলার রাজধানী শহরে সেই অজপাড়া গায়ের সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের ঢুকার ক্ষমতা ছিলনা৷ যা আমি আমার জীবন থেকে জেনেছি৷ ১৯৯৪ এ আমার চাকুরীর সময়ও সেদিন আমার বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ঢাল হয়ে আমার সামনে দাড়িয়েছিলেন৷ এখনও সত্যিকারে মুক্তিযোদ্ধা না হযেও অনেক মুক্তিযোদ্ধা সেজে বাড়ী, জায়গা জমি হাতিয়ে নিয়েছে আবার দেখেছি অনেক সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধার বাড়ীতে একটি টিউবওয়েল, পাকা ল্যার্টিনও নেই৷ আবার দেখেছি শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী তার সন্তানদের বাচাঁনোর জন্য দিনের পর দিন সংগ্রাম করে মৃতুবরন করেছেন৷ এগুলি সবই জীবন্ত সত্য৷

তারপর ১৯৯১ সনে আমার এক স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধা আত্মীয় আমাকে বলেছিলেন, 'সম্ভব হলে তোমার বড় ভাইয়ের একটি সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে আন৷' কিন্ত আমি সেদিন তার কথার গুরুত্ব দেইনি৷ আজ বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে-সেদিন যদি আনতে পারতাম তবে হয়ত একটি জায়গার মালিক হতে পারতাম৷ আর এইত সেদিন সাবেক রাষ্ট্রদূত বনাম ইনভয় স্যারের মেইল হতে জানিয়েছিলেন তার সহকারী-
Ambassador Rahman is a freedom fighter. He resigned from the Pakistan Foreign Service in 1971, and campaigned for Bangladesh Liberation in Europe. After the assasination of Bangabandhu, he was made OSD for his role in the liberation war. তারপর একদিন স্যারের কাছে আমাদের নড়াইলের এসএম সুলতানের স্কেচের মূল্যের কথা জেনে অবাক হয়ে লিখেছিলাম- 'সেই নড়াইলের অজপাড়া গাযে জন্ম নেয়া এসএম সুলতান ও তার স্কেচ যদি এতই মুল্যবান হতে পারে তবে এসকে মুখার্জীর আদর্শে গড়া আমার মত জীবন্ত প্রটেট বাঙ্গালীর মূল্য কেন হবেনা ?

তারপর সেই ১৯৭১ থেকে আমার সংগ্রামী জীবনে চলতে গিয়ে আমি আজ প্রতিবন্ধীতে পরিণত হয়েছি৷ আজ কেবল রাহিলা ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মনে করিনা আমি নিজেকে অনেক সঙ্গায় সঙ্গায়িত করেছি৷ আর তারই ধারাবাহিতায় আমি গত মাসে আমার জন্মস্থান নড়াইল গিয়েছিলাম আমার বড় ভাই মৃত নুরুল ইসলামকে মরনোত্তর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব দেয়ার জন্য আর আমাকে শিশু মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য৷ আমি আমার সিডিউল অনুয়ায়ী গত ১লা ডিসেম্বর নড়াইল মুক্তিযোদ্ধা সংসদে সদস্য সচিব, মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড,নড়াইল হাবিব ভাইয়ের কাছে যাই৷ প্রথমত আমি আমার পরিচয় না দিয়েই দেখা করার জন্য মোবাইলে কথা বলে গিয়েছিলাম৷ ছোট বেলা হতেই জেনে আসছি আমার বড় ভাই এর অনেক কাছের বন্ধু হাবিব ভাই৷ তিনি আমাকে জানলেও আমি জানিনা৷ তারপর একসময় গিয়ে সালাম দিয়ে নিজের পরিচয় দিলাম যে আমার বাড়ী জালালসী , বাবার নাম ইউসুফ মোল্যা৷ আমার এখানে আসার উদ্দেশ্যের কথা জানালাম৷ আমার কথার মাঝ দিয়ে তিনি মোবাইলে মেজে ভাইকে ফোন করে বললেন, "নুর, রাহিলা এসেছে ইসলামের সার্টিফিকেট নিতে৷ আমি কি করব ? মিস্টি খাইয়ে ওকে বাসায় পাঠিয়ে দেই, সন্ধ্যায় আমি বাসায় আসব৷" ফোন রেখে এবার বললেন, মার নাম্বার দেও, কথা বলি৷ আমি বললাম, 'না আপনার কথা বলতে হবেনা৷ আমার মা দীর্ঘ ৩৪ বছর তার ছেলের বিচার স্বয়ং আ্ল্লার উপর ছেড়ে দিয়েছে৷ নড়াইলের সকলে নুরুল ইসলামকে ভুলে গেলেও আমি ভুলিনি৷ আজ এখানে সকলেই বড় মাপের এক একজন মুক্তিযোদ্ধা৷ আমার পাশে বসা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন৷ আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, 'আপনারা সকলে যুদ্ধ করেছেন ? তবে যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেনি কিন্ত সাপোট করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাত খাইয়েছে ৷ তারা কি মুক্তিযোদ্ধা নয় ? তাদের ভিতর একজন বললেন, হ্যা৷ আমি তখন আমার লেখা পত্রটি ও আমার লেখা " নড়াইল গোপালগঞ্জসহ সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধা ভাইবোনকে বলছি' ও " এ ক্ষতিপূরণ আমি কার কাছে চাইব ? আর্টিক্যাল দুটিসহ তাদের কাছে দিয়ে চলে এলাম৷ পরবর্তীদিন আমি আবার সেখানে গিয়েছিলাম হাবিব ভাই এর সাথে দেখা করে দুইটি ফরম নিয়ে এসেছিলাম৷ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য সচিব হাবিব ভাই আমাদের পরিবারের অনেক সম্মানীয়৷ কেবল সেখানকার সবকিছু দেখে, বুঝে বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে এটাই প্রতিয়মান হয় যে দীর্ঘ ৩৭ বছর পরে মানুষের নৈতিকতা, আদর্শের অনেক পরিবর্তন হয়েছে৷ আর এর জন্য দায়ী আমাদের পরিবেশ পরিস্থিতি৷ সেই ১৯৭১ এর পর যে যার যার মত করে জীবনকে গড়ে নিয়েছে৷ সেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে আজ তাদের বিতর্কিত হতে হয়েছে৷ আর এই কারনেই এত বিপুল পরিমানে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার সৃষ্টি হয়েছে৷ আমি শুনেছিলাম আমার ছোট চাচা শশুর কাশিয়ানীর চাপ্তা গ্রামের শহীদ আ: রউফ মিনা পিলখানা হতে পালিয়ে গিয়ে প্রথম গোপালগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা সংঘটিত করে পরবর্তীতে সম্মুখ সমরে যুদ্ধে নিহত হয়েছেন তার লাসটাও সেদিন আমার বৌমা দেখতে পারেনি৷ পরবর্তীতে তিনি সামান্য ভাতা পেলেও তার চারটি সন্তান নিয়ে ভিষণ সংগ্রাম করে বেচেঁ ছিলেন৷ তার সন্তানদের একটি চাকুরী ও একটি বাসস্থানের জন্য ঢাকায় ঘুরতে দেখেছি৷ আবার ২০০৫ সনে আমি আমার বড় ননদের বাড়ী গোপালগঞ্চ নিজড়া গিয়েছিলাম৷ সেখানে দাদু এস এ মান্নান ১৯৭১ সনে কর্নেল এম এ জি ওসমানীর অধিনে ৮ নং সেক্টরে সম্মুখ সমুরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন৷ তিনি ভাতা পান৷ তবে তার বাড়ীতে গিয়ে দেখলাম একটি টিউবওয়েল ও পাকা সেনিটারী লেট্রিন নেই৷ এই হল আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা৷ আজ আর নৈতিকতা, আদর্শ ও মুল্যবোধ বলে পৃথিবীতে কিছু নেই৷ তবে একেবারে নেই তা বলবনা৷ আজও সততা, নৈতিকতা, আদর্শ ও মুল্যবোধ আছে বলেই পৃথিবীটা আজও সুন্দর মনে হয়৷

এইত সেদিন নড়াইল গিয়ে মায়ের কাছে জানলাম, মায়ের অসুস্থ্যতার সময়ে সাঈদ ভাই তার স্ত্রীকে নিয়ে মাকে দেখত্ এসেছিলেন৷ তিনি নাকী অনেকগুলি ভ্যান কিনে সেই ব্যবসায়ে জড়িত হয়েছে৷ আমার ক্ষুদ্র চিন্তাশক্তিতে বলব তাকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সম্মান দেয়া উচিত ছিল সেদিনের সেই বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে৷ আর তারই জন্য তার বাবাকে সেদিন রাজাকারেরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল৷ হয়ত সেই লাসটাও দেখার সৌভাগ্য তাদের সেদিন ছিলনা৷ আর আজ মুক্তিযোদ্ধার বিচার হলেই কি ফিরিয়ে দিতে পারবে সাঈদ ভাইয়ের সেই চোখের পানি৷ আর মুছে যাবে আমার মায়ের সেই সন্তান হারা যন্ত্রনাগুলো ? না কিছুই হবেনা৷ তাই আমরা আমাদের বিচার সেই আল্লাহর আদালতে রেখে দিযেছি অনেক বছর আগে, মানুষের আদালতে নয়৷

পরিশেষে এদেশের একজন স্বনাম ধন্য মুক্তিযোদ্ধার সাথে সুর করে বলব-'মানুষের আদালতে কেবল কাগজের প্রয়োজন হয় কিনত্ম আলস্নাহর আদালতে হয়না৷' তাই আমি আজ এই পৃথিবীর সেইসব মানুষের আদালতে আমার বড় ভাইয়ের মরনোত্তর মুক্তিযোদ্ধার খেতাম আর নিজের জন্য শিশু মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট আশা করিনা কারণ এই পৃথিবীতে তার আর প্রয়োজন হবেনা কেবল প্রয়োজন হবে আলস্নাহর আদালতে আর সেই আদালতের জন্য আমি আলস্নাহর কাছে সেই সম্মান দাবী করব৷ (সমাপ্ত) 

কৃষান কন্যা ১৪/১২/ ২০০৯





2 comments:

  1. গত ২রা ডিসেম্বর/০৯ তারিখে নড়াইল উকিল বারের দ্বোতলায় এডভোকেট সন্তোষ বিশ্বাস দাদার টেবিলে বসে আলাপের এক পর্যায়ে জানালেন তিনি- By the people, of the people Av‡Q but for the people নেই৷ আর আমি সেই ফর দি পিপলস খুজাঁর জন্য সেখানে বসে থেকে একসময় চলে এলাম৷

    ReplyDelete
  2. গতকাল আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তারপর কিছু শিক্ষিত প্রতিবন্ধী বন্ধুরা আমার নামে আজে বাজে মন্তব্য করেছে যা আমি ভিষণভাবে মর্মাহত হয়েছি। প্রতিমন্ত্রী িএড: আবদুল মান্নান খান ভুমি দশ্যু সম্পকে বলেছিলেন প্রেসক্লাবে েএকটি সংবাদ সম্মেলনে-’ সত্যের উপর বড় শক্তিশালী পৃথিবীতে আর কিছু নেহ। আজ যদি বাংলার অসহায় জনগনের জন্য বিচার,মিডিয়া থেকে থাকে তবে সত্যকে তুলে আনতে হবে জাতির সামনে কৃষান কন্যা ১৯৭১ সনে স্বাধীনরা বিরোধী শক্তি না পক্ষ শক্তি ছিল তবে আমার এ লেখাটি আপনাদের অনেকটা সঠিক তথ্য দিতে পারবে বলে আজ আশা করি।

    ReplyDelete